জিয়াউল হক-এর বই- মুসলিম উম্মাহর পতন, উত্তরণের পথ

ln.Author: গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স

ln.Date : Sep 3, 2024
ln.ToatalView : ৪৯
জিয়াউল হক-এর  বই- মুসলিম উম্মাহর পতন, উত্তরণের পথ

একদিন আলি (রা.) কুফার একটি মসজিদে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছেন।

এমন সময় মসজিদের এক কোনায় ‘লা হুকমা ইল্লা লিল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর হুকুম ছাড়া আরও হুকুম মানি না’ স্লোগানে একটা হট্টগোল শুরু হয়। 
মুয়াবিয়া (রা.)-এর সাথে বিরোধের নিষ্পত্তিকল্পে গঠিত সালিশি কমিটির দিকে ইঙ্গিত করে তারা আলি (রা.)-কে উদ্দেশ্য করে বলে, আপনি বিচারব্যবস্থা মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন! অথচ বিচারের মালিক হচ্ছেন আল্লাহ।

তারা নিজেদের দাবির সপক্ষে সূরা আনআমের ৫৭ নং আয়াত— ‘আল্লাহ ব্যতীত কারও ফয়সালা গ্রহণযোগ্য নয়’-এর উদ্ধৃতি তুলে দাবি করে, আলি (রা.) আল্লাহর হুকুম ভঙ্গ করেছেন। আর আল্লাহর বিধানের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের কারণে আলি (রা.) মুশরিক (!) হয়ে গেছেন!
যেহেতু কাফিরের আনুগত্য করা জায়েজ নেই, তাই যে বা যারা আলি (রা.)-কে কাফির মানবে না, সে-ই কাফির হয়ে যাবে। এই হিসেবে সকল সাহাবি কাফির ও মুরতাদ হয়ে গেছে! 

ইতিহাসে এরা খারেজি হিসেবে পরিচিত। খারেজি শব্দের অর্থ বের হয়ে যাওয়া বা বহিষ্কৃত। এরাই সর্বপ্রথম একটি বৈধ খিলাফত অস্বীকার করে মুসলিম উম্মাহর মূল অংশ থেকে বের হয়ে মদিনার অদূরে হারুরা প্রান্তরে আলাদা বসতি স্থাপন করে। একটি ইসলামি রাষ্ট্রের ভেতর সূচনা করে স্বতন্ত্র সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ। 

এই উগ্র দলটি প্রকাশ্যে এসেছিল আলী (রা.) ও মুয়াবিয়া (রা.)-এর মধ্যে রাজনৈতিক ও সামরিক সমঝোতার জন্য সালিশকে কেন্দ্র করে। সালিশের ফয়সালা পছন্দ না হওয়ায় আলি (রা.)-এর দল থেকে কয়েক হাজার সৈন্য বিদ্রোহ করে দল ত্যাগ করেছিল। 
তাদের অভিযোগ— খলিফা আলি (রা.) কাফির (!) হয়ে গেছেন! তাঁর ঈমান চলে গেছে। কেননা, তিনি সূরা হুজুরাতের ৯ নং আয়াতের নির্দেশনাটি মানেননি। সেই আয়াতে বলা আছে—‘মুমিনদের দুই দল যু- দ্ধে লিপ্ত হলে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতঃপর তাদের একদল যদি সীমালঙ্ঘন করে, তবে সীমালঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে যু- দ্ধ করো; যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে না আসে।’

মুয়াবিয়া (রা.)-এর দল যেহেতু সীমালঙ্ঘনকারী, তাই তারা আত্মসমর্পণ না করা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যু- দ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু আলি (রা.) তা না করে মুয়াবিয়া (রা.)-এর সাথে সন্ধি করার মাধ্যমে সূরা হুজুরাতের উক্ত আয়াতটির স্পষ্ট লঙ্ঘন করেছেন। ফলে তিনি কাফির (!) হয়ে গেছেন। 

খারিজিদের উগ্রতার সীমা ছাড়িয়ে গেলে সকল সচেতন মহল থেকেই তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা শুরু হয়। 
এ লক্ষ্যে খলিফা আলি (রা.) খারিজিদের নিকট পাঠান আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে। তাঁর এই প্রচেষ্টা একেবারে বিফলে যায়নি। দীর্ঘ আলোচনার পর খারেজিদের একটা অংশ সঠিক পথে ফিরে আসে। তবে অধিকাংশ পথভ্রষ্টই থেকে যায়। 

এরা প্রায় সকলেই ছিল কট্টরপন্থি, অত্যন্ত উগ্র মতাবলম্বী। আলি (রা.)-এর প্রতি অনুগত এবং তাঁর খিলাফতের অধীনে থাকা সকল মুসলিমকে তারা কাফির বলে মনে করত। এই সূত্র ধরেই তারা প্রখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে খাব্বাব (রা.)-কে সপরিবারে হত্যা করে। 
সম্মানিত এই সাহাবির অপরাধ কেবল এতটুকুই ছিল, তিনি আলি ও মুয়াবিয়া (রা.)-সহ এই রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়িত পক্ষ-বিপক্ষের সাহাবিদের কাফির মনে করতেন না। 

শুধু এ কারণেই তারা ইবনে খাব্বাব (রা.)-কে নদীর পার নিয়ে গিয়ে জবাই করে। শুধু তাই নয় তাঁর সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পেট চিরে তাঁকেও নৃশংসভাবে হত্যা করে! 

খলিফা আলি (রা.) নৃশংস ও বর্বর এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু করলে হ+/ত্যাকারীরা অত্যন্ত দম্ভভরে এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয়, এই কাফিরকে (!) তারাই হত্যা করেছে।

ক্যাটাগরি: ইতিহাস ও সভ্যতা
প্রকাশনী: গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স
পৃষ্ঠা সংখ্যা: 182
মূল্য: 250টাকা

ln.RelatedArticle