হায় আল্লাহ! নবিজি ﷺ মাত্র নয় বছরের মেয়ের সঙ্গে একান্তে সময় কাটিয়েছেন!

ln.Author: গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স

ln.Date : Sep 9, 2024
ln.ToatalView : ৩০
হায় আল্লাহ! নবিজি ﷺ মাত্র নয় বছরের মেয়ের সঙ্গে একান্তে সময় কাটিয়েছেন!

এই ধরণের উক্তি আমাদের অজ্ঞতাকেই প্রকাশ করে। কেননা, নয় বছর বয়সে বিয়ে করাতে কোনো সমস্যা নেই। সে যুগের জন্য এটাই ঠিক ছিল। আমরা যদি নিজেদের দাদি-নানিদের বিয়ের খোঁজ নিই, তবে অনেকেই দেখব তাদের বিয়েও হয়েছে ০৯-১০ বছর বয়সে। তৎকালে এমন বয়সে বিয়ে হওয়ার প্রচলন ছিল।

ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, সময় ও সংস্কৃতির পরিবর্তন অনুযায়ী বয়ঃসন্ধিকাল দেরিতে শুরু হচ্ছে। বুদ্ধিমত্তার বিকাশও দেরিতে হচ্ছে। আর নয় বছর বয়সে আয়িশা (রা) যদি শারীরিক ও বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে পরিপূর্ণ হয়ে থাকেন, তাহলে নবিজি ﷺ তাঁর সাথে একান্ত সময় কাটিয়ে কোনো অন্যায় করেননি। সুতরাং এ ক্ষেত্রে তাঁর নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই।

বর্তমানে একটি প্রচলিত শব্দ হলো, ‘কিশোর-কিশোরী’। এর দ্বারা কেউ যৌন বিষয়ে পরিণত কীনা, তা বোঝা দায়। বয়ঃসন্ধি হলো পরিপক্বতার লক্ষণ। তাই ইসলাম বয়ঃসন্ধি তথা বালেগ-বালেগা হওয়াকেই বিয়ের উপযুক্ততার মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে।
বয়ঃসন্ধির ধরন যুগ থেকে যুগান্তরে এবং সংস্কৃতি ভেদে ভিন্ন হয়। তাই অতীতের কোনো ঘটনা সম্পর্কে মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সেই সময়ের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করতে হবে। মাথায় রাখতে হবে আমাদের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও রীতিনীতি এবং সেই সময়ের রীতিনীতি এক নয়।

এটি সর্বজন বিধিত যে, বাল্যকালে বিয়ের প্রচলনটি অতীতে কেবল আরবে নয়; সারা পৃথিবীজুড়ে প্রথাসিদ্ধ ছিল। মানবজাতির ইতিহাসের গোড়া থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত বাল্যকালে বিয়ের প্রচলন ছিল, বিশেষ করে বিখ্যাত ব্যক্তিদের বিয়ের ক্ষেত্রে। রাজাদের কন্যা বা মহান ব্যক্তিদের কন্যাদের খুবই অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হতো। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তাদের পূর্ণ সম্মতিও নেওয়া হতো না।

রাজনৈতিক কারণেও অল্পবয়সে বিয়ে দেওয়া হতো। দুটি পরিবার, দেশ বা অঞ্চলের মধ্যকার কোনো চুক্তির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে, চুক্তিকে মজবুত করতে এ রকম বিয়ে অনুষ্ঠিত হতো। দুটি বিবাদমান রাষ্ট্রের মধ্যে শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যেও অল্পবয়সে বিয়ে হতো।
উদাহরণস্বরূপ আমরা স্পেনের বিবাদমান দুটি অঞ্চলের মিলের জন্য ফার্ডিনান্দ ও ইসাবেলার কথা আনতে পারি। এটি ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কেননা, এ বিয়ের মাধ্যমে বিবদমান দুটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র এক হয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে এবং স্পেন থেকে মুসলিমদের বিতাড়নে সমর্থ হয়। এটি রাজনৈতিক বিয়ের একটি স্পষ্ট উদাহারণ।
এ ক্ষেত্রে ভালোবাসা বা অন্য কোনো ব্যাপার ছিল না; এটা ছিল দুটি রাষ্ট্রের ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে পরিণত হওয়ার ব্যাপার। সে সময় এ ধরনের রাজনৈতিক বিয়ের প্রচলন ছিল।
তা ছাড়া সে সময়ে প্রত্যাশিত গড় আয়ু কম ছিল। বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হতো অল্প বয়সেই। সংস্কৃতি ও প্রচলিত রীতি-পদ্ধতি ছিল বর্তমান যুগ থেকে ভিন্ন। এজন্যই এতদিন কট্টর ইসলামবিরোধী শক্তিও নবিজি ﷺ-এর জীবনের এ ঘটনাকে সমস্যা হিসেবে চিত্রায়িত করেনি। এটা নতুন উত্থাপিত ইস্যু। মাত্র ৩০-৪০ বছর আগ থেকে এ বিষয়টিকে সমস্যা হিসেবে চিত্রায়িত করা শুরু হয়েছে।

আর ২০০ বছর আগেও যখন পশ্চিমা লেখকরা নবিজি ﷺ সম্পর্কে লিখেছেন, তারা এ বিষয়টিকে সমস্যা হিসেবে চিত্রায়ণ করেননি। কেননা, ২০০ বছর আগেও এ রকম অল্প বয়সে বিয়ে সংঘটিত হতো।
সুতরাং যারা নবিজি ﷺ ও আয়িশা (রা.)-এর বিয়ের বয়স নিয়ে বাজে মন্তব্য করে নবিজি ﷺ-এর চরিত্রের ওপর কলঙ্ক লেপনের অপচেষ্টা করে, তারা মূলত ‘অ্যাকাডেমিক্যালি’ শিক্ষিত নয়। তারা হয়তো হাইস্কুল বা কলেজে পড়েছে (রা.) অন্য কোথাও পড়ালেখা করলেও তাদের জ্ঞান আহরণ ও বিশ্লেষণ পদ্ধতি এই পর্যায়ের); কিন্তু তারা ইতিহাস ভালো করে পড়েনি।
কেননা, ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করলে এ বিষয়টি জানা থাকবে যে, বিয়ের বয়স ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়েছে।
আমি কিছু ইতিহাসের চিত্র তুলে ধরতে চাই; যেন এর মাধ্যমে অজ্ঞ সমালোচনাকারীরা জবাব পেয়ে যায়।

পশ্চিমা বিশ্বে প্রথমবারের মতো বিয়ের বয়স নিয়ে আইনগত সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা শুরু হয় সিজার অগাস্টাস-এর শাসনামলে। তখন ঠিক করা হয়, বিয়ের সময় মেয়েদের বয়স ১০ বছর হতে হবে। তিনি এ আইন করেছিলেন বটে, কিন্তু এজন্য জনগণকে বাধ্য করেননি। আর আয়িশা (রা.) নবিজি ﷺ-এর সাথে একান্তে রাত্রিযাপন শুরু করেন নয় বছর বয়সে।
সুতরাং এখানে সমস্যার কী কারণ থাকতে পারে? যারা ১০ বছর আর নয় বছর বয়সের গুণগত পার্থক্য নিয়ে হাজির হবেন, তাদের জেনে রাখা উচিত, ইউরোপীয় ও আরবদের ভ’প্রকৃতি ও সংস্কৃতি আলাদা ছিল।
তা ছাড়া মধ্যযুগীয় ইউরোপে গ্রেশন দ্যা ক্লেরিক ছিলেন ক্যানন ল (রা.) ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের শরিয়ত-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ক্যানন ল-এর রূপদান করা হয় ১২ শতাব্দীতে। তিনি ক্যানন ল-তে লিখেন, বয়ঃসন্ধির সময় হলো ১২-১৪ বছর। আর এটাই বিয়ের জন্য ন্যূনতম আইনসংগত বয়স হওয়া উচিত। তবে তিনি স্বীকার করেন, এ বয়সসীমার আগেও বিয়ে হতে পারে। তিনি এখানে ৯০০ বছর আগের প্রচলন ও সংস্কৃতি অনুযায়ী বলেছেন, ১২-১৪ হতে পারে বিয়ের আইনসংগত বয়স।

শেক্সপিয়র রোমিও ও জুলিয়েট লিখেছেন ৫০০ বছর আগে। এ নাটকের মঞ্চায়নের সময় জুলিয়েট চরিত্রে যে নায়িকা অভিনয় করেছে, তার বয়স ছিল ১৩-১৪ বছর। এর কারণ কী? কারণ হলো-‘বায়োলজিক্যালি’ ও বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে ৫০০ বছর আগে ১৩-১৪ বছরের মেয়েকে বর্তমান যুগের ১৭ বছর বয়সি মেয়ের সমান জ্ঞান করা হতো। আমাদের সময়ে ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভালোবাসার আবেগ দেখা যায় ১৪-১৫ বছর বয়সে।

আর ৫০০ বছর আগে জুলিয়েট ছিল ১৩ বছর বয়সের। এর মাধ্যমে আমরা কী বুঝতে পারি? বুঝতে পারি-এ বিষয়টি সময় ও কালের পরিক্রমায় পরিবর্তন হয়।
ফ্রান্সের আইন প্রণয়নের ইতিহাসে ‘নেপোলিয়নিক কোড’ নামের একটি আইন রয়েছে। এটি মাত্র ২০০ বছর আগের আইন। এতে মেয়েদের বিয়ের আইনসংগত বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ১৩ বছর।
এখানে আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, এ বয়সসীমা ছিল আইনসংগত বয়সসীমা। ফলে সে যুগের মেয়েদের বয়ঃসন্ধি ও বিয়ের বয়স আরও আগেই হয়ে যেত বলে আমরা বুঝতে পারি।

১৫, ১৬, ১৭ শতাব্দীর ইংল্যান্ডে এমন অল্প বয়সে বিয়ে সংঘটিত হওয়ার শত শত ‘কোর্ট রেকর্ড’ আছে। এমনকী ‘প্রি-কলোনিয়াল’ আমেরিকায়ও ১৬, ১৭ শতাব্দীতে ১০, ১১, ১২ বছর বয়সে বিয়ে হওয়ার ‘কোর্ট রেকর্ড’ পাওয়া যায়।

ম্যাসাচুসেটসের একটি বিখ্যাত কেইসে আমরা দেখতে পাই—১০ বছরের স্ত্রী তার স্বামীর নিকট তালাক চাইছে! তাহলে তার বিয়ে কখন হয়েছে? আপনারাই চিন্তা করুন। অবশ্যই তালাক চাওয়ার আগে! এটা ছিল ৩০০ বছর আগে ‘প্রি-কলোনিয়াল’ আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসের ঘটনা।
সুতরাং আমাদের কাছে যখন নবিজি ﷺ ও আয়িশা (রা.)-এর বিয়ের বয়স অগ্রহণযোগ্য মনে হবে, তখন মাথায় আনতে হবে, বিষয়টি সে যুগের মানুষের জন্য মোটেই অগ্রহণযোগ্য কিছু ছিল না।

ঐতিহাসিকভাবে বিষয়টি প্রমাণিত যে, সময় ও সংস্কৃতির পরিবর্তন অনুযায়ী বয়ঃসন্ধিকাল দেরিতে শুরু হচ্ছে। বুদ্ধিমত্তার বিকাশও দেরিতে হচ্ছে—আমরা সকলেই তা জানি। আর নয় বছর বয়সে আয়িশা (রা.) যদি শারীরিকভাবে ও বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে পরিপূর্ণ হয়ে থাকেন, তাহলে নবিজি ﷺ তাঁর সাথে একান্ত সময় কাটিয়ে কোনো অন্যায় করেননি।
সুতরাং এ ক্ষেত্রে তাঁর নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই।
মনে রাখতে হবে, আয়িশা (রা.)-এর বিয়ের বয়স তাঁর সময়কালে এবং অতীতে সমস্যার কিছু ছিল না। কেবল বর্তমানেই এটাকে সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা না করেই।

আর আমি এটাও বলছি না যে অতীতের এ ঘটনাকে কাট-পেস্ট করে বর্তমানেও তেমনটাই করতে হবে। এখন আমাদের সময়ের চাহিদার আলোকে বিয়ের ন্যূনতম বয়স নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কারণ, আমাদের যুগের নারী-পুরুষ আর অতীতের নারী-পুরুষ এক নয়।
শারীরিক ও জৈবিক গঠন, বুদ্ধিমত্তা কোনো দিক থেকেই সমান নয়। সুতরাং ইসলামি সমাজ যৌক্তিকভাবে বিয়ের ন্যূনতম বয়স প্রবর্তন করতে চাইলে এতে সমস্যা নেই। শরিয়াহ কখনো এটা বলে না, সময়ের চাহিদার আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।

হারাম হলো—নবিজি ﷺ তাঁর সময় ও যুগে যেসব কাজ করেছেন, সেগুলোর সমালোচনা করা। এটা কুফুরি। সেগুলোকে অনৈতিক মনে করা কুফুরি।
তবে এটাও কেউ বলছে না যে আয়িশা (রা.)-এর বিয়ের বয়সকে আমাদের সময়ে অনুসরণ করে অতি অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিতে হবে। আর সময় ও যুগের চাহিদার ভিত্তিতে বিয়ের বয়সসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়াতে বাধা নেই।

যদি মনে হয় স্থান, কাল ও পাত্রভেদে বিয়ের ন্যূনতম বয়স বাড়ানো উচিত, আমরা তা বাড়াতে পারি। বর্তমানে আমেরিকার অনেক অঞ্চলেই বিয়ের ন্যূনতম বিয়স ১৫-১৬ বছর বয়স। আমেরিকায় শর্তসাপেক্ষে ১২-১৩ বছর বয়সে বিয়ের অনুমোদন দেওয়া কেসের সংখ্যা সম্ভবত ১ ডজনের বেশি হবে। বর্তমান যুগেই এত কম বয়সে বিয়ে হচ্ছে। আজকাল আমেরিকার মিডল স্কুল ও হাইস্কুলের বাচ্চারা তো অনেক আগেই যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে (রা.) সব ক্ষেত্রে হয় না হয়তো)।
সুতরাং কেউ যদি নবিজি ﷺ-কে আয়িশা (রা.)-এর বিয়ের বয়স নিয়ে দোষারোপ করে, তবে সেটা তার মূর্খতার পরিচয় বহন করে।
ড. ইয়াসির কাদি রচিত নবিজির স্ত্রীগণের জীবনী নিয়ে বই ‘বিশ্বাসীদের মা’-এ এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।

ক্যাটাগরি: সাহাবিদের জীবনী
পৃষ্ঠা সংখ্যা: 112
মূল্য: 75 টাকা

ln.RelatedArticle