উমর (রাঃ) এর ঢাকা সফর বই
ln.Author: গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স
: Sep 15, 2024
: ১৩৩
হযরত উমর (রাঃ) চরিত্রটি বরাবরই আমাকে অনেক বেশী মুগ্ধ করে। ওনার সম্পর্কে যতই পড়ি, যতই জানি, এই অশান্ত; অবিচারে ভরা পৃথিবীতে ওনার প্রয়োজনীয়তা ততই অনুভব করি। কারণ তিনি ছিলেন ন্যায় ও ইনসাফের মূর্ত প্রতীক। এই প্রিয় ব্যক্তিত্ব যদি ঢাকা সফরে আসতেন তাহলে কেমন হতো ওনার এই সফর? সফর শেষে কেমন হতো ওনার প্রতিক্রিয়া? এই বইটি দেখে এই বিষয়গুলো মাথায় আসে। তাই বইটি পাঠে আগ্রহী হই। ৯০ এর দশকে রচিত বইটি তখন তুমুল আলোড়ন তুলেছিলো। বইটি পড়ার পরে আমার মনে হয়েছে এই বর্তমান সময়েও বইটি অনেক বেশী প্রাসঙ্গিক।
"উমর (রাঃ) ঢাকা সফর" বইটি সম্পুর্ণ ভিন্ন মাত্রার একটি বই। এটি লেখকের ব্যতিক্রমধর্মী উপস্থাপনা। যেটা লেখক নিজেই বলেছেন। ঢাকার বাসিন্দা এক যুবকের একটি স্বপ্নকে কেন্দ্র করে এই বইয়ের ঘটনা প্রবাহ এগিয়ে চলে। যুবক স্বপ্নে দেখে একজন বিদেশী মেহমান ঢাকার রাস্তায় হাঁটছেন আর চারপাশে সবকিছু দেখে যুবকের সাথে সেই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলছেন। সেই অতিথি আর কেউ নয়, উনি হলেন অর্ধ পৃথিবীর শাসক আমিরুল মোমেনিন হযরত উমর (রাঃ)। অতিথি যুবকের সাথে হাঁটছেন আর চারপাশে সবকিছু দেখে কখনো বিরক্ত হচ্ছেন, কখনো অশ্রুসজল হচ্ছেন, কখনো রাগান্বিত হচ্ছেন, কখনো আবার দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন।
এই বইটি পাঠকের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিবে আল্লাহ সুবাহানু তায়ালা তার প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর মাধ্যমে এই পৃথিবীবাসীর জন্য কোন ইসলাম দিয়েছেন, আর এদেশের মানুষ কোন ইসলাম অনুসরণ করছে। অতিথির ভাষায় "তোমাদের দেশের লোক দ্বীন ইসলামের বাহ্যিক রূপকে খুব বেশি ভালোবাসে। দ্বীন ইসলামের অন্তর্নিহিত ভাবধারা তারা তলিয়ে দেখতে চায় না। তাই তাদের এনতার ধর্ম-কর্ম সত্ত্বেও তারা দুনিয়া ও আখিরাতের লোকসানের মধ্যে রয়েছে।"
অতিথি আরো বলেন "তোমরা দ্বীন ইসলামের বাহ্যিক আবরণ নিয়ে টানাটানি করছ। আসল রুহের সন্ধান এখনও পাওনি। তাগুতকে মনে করো ইসলামের খাদেম, দ্বীনের দুশমনকে ভাব আল্লাহর দোস্ত।"
ফোরাতে তীরে একটা কুকুরও যদি না খেয়ে মারা যায় এই জবাবদিহিতার কথা ভেবে ইসলামি রাষ্ট্রের শাসক যেখানে পেরেশান হয়ে যেতো সেখানে এই দেশে শত শত বণি আদম ক্ষুধা নিবারনের জন্য ডাস্টবিনে কুকুরের সাথে ফেলে দেওয়া খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি করে অথচ এখানকার শাসকরা কি নির্বিকার!
এ দেশের শহরগুলোর একপাশে শত শত অসহায় দরিদ্র গৃহহীন মানুষ রাস্তার ধারে ফুটপাতে খোলা আকাশের নীচে শুয়ে রাত কাটায় অথচ শহরের অন্য পাশে সারি সারি আকাশছোঁয়া অট্টালিকায় কিছু মানুষের বিলাসী জীবন।
শুধু তাই নয় এদেশের মানুষ আল্লাহর দেয়া বিধানকে পাশ কাটিয়ে নিজেরাই বিভিন্ন নিয়ম-কানুন চালু করেছে। যার অনেকগুলো আল্লাহর দেয়া বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। সাধারণ মানুষ কখনো না জেনে, না বুঝে, আবার কখনো দেশের কর্তা ব্যক্তিদের দ্বারা বাধ্য হয়ে এই নিয়ম-কানুনগুলো অনুসরণ করে।
পারস্যের অগ্নি উপাসক দাম্ভিক শাসক খসরু পারভেজের অনির্বাণ অগ্নিকুণ্ড চিরতরে নিভিয়ে দেয়ার জন্য ইসলামের সেনারা অকাতরে প্রান বিলিয়ে দিয়েছিলো আর এই দেশে নানা ছুতোয় অগ্নিকুন্ড প্রজ্জ্বলিত করা হয়।
ইসলামের বীর সন্তাদের জন্য কোন প্রতিকৃতি বা সৌধ নির্মাণ না করলেও এই দেশে বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর নামে প্রতিকৃতি আর সৌধ বানিয়ে তাতে ফুল ছিটানো, তার সামনে দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করে শিরকের মতো গুনাহে লিপ্ত হয়।
এই রকম আরো অনেক অসংগতি ও অনাচারের মাধ্যমে এই দেশের মুসলমানরা ইসলাম থেকে কতটা দূরে সরে গিয়েছে বইটি পড়ার পরে পাঠক তা উপলব্ধি করতে পারবেন। বইটি পাঠকের বোধের দুয়ার উন্মুক্ত করে দিবে। পাঠকের চিন্তার জগতে ঝড় তুলবে। যা এই অসংগতি ও অনাচারগুলো দূর করতে বড্ড বেশী প্রয়োজন। আমি মনে করি এই দেশের প্রতিটি মুসলমানের এই বইটি পড়া উচিত।
লেখক: মুহাম্মদ নুরুযযামান
প্রকাশনী: গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স
প্রকাশকাল: ১৬ জুন, ২০২২
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১২০
মূল্য: ১৪০ টাকা।