গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে এবং কাজের শুরুতে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণপূর্বক গভীর চিন্তা-ভাবনা করা সুন্নাহ। ইলমি পরিভাষায় একে ইস্তেখারা বলে। রাসূল (সা.) নিয়মিত ইস্তেখারা করতেন এবং সাহাবাদেরও শিক্ষা দিতেন।
জাবির (রা.) বলেন– ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) এমনভাবে আমাদের ইস্তেখারা শিখিয়েছেন, যেভাবে শিখিয়েছেন কুরআনের সূরাসমূহ।’৩৯২
ইস্থেখারা করার আদব :
১. ভালো ও মন্দ কোনো দিককে নিজ থেকে প্রাধান্য না দিয়ে ইস্তেখারা করা। নবি (সা.) বলেছেন–‘যখন তোমাদের সামনে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আসে, তখন ইস্তেখারা করবে।’৩৯৩
২. দুই রাকাত নামাজ পড়া। নবি (সা.) বলেছেন–‘যখন তোমাদের সামনে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আসে, তখন ফরজ ছাড়া দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বে।’৩৯৪
৩. নামাজের পর হাদিসে বর্ণিত দুআ পড়া। নবি (সা.) বলেছেন–যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তোমাদের সামনে আসে, তখন ফরজের বাইরে দুই রাকাত নামাজ পড়বে। এরপর এই দুআ পড়বে–
اَللّٰهُمَّ اِنِّي اَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَاَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَاَسْاَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ، فَاِنَّكَ تَقْدِرُ وَلَا اَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلَا اَعْلَمُ، وَاَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ، اَللّٰهُمَّ اِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ اَنَّ هَذَا الْاَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي، وَمَعَاشِي، وَعَاقِبَةِ اَمْرِي ‘ اَوْ قَالَ : ‘ عَاجِلِ اَمْرِي وَآجِلِهِ، فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ، وَاِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ اَنَّ هَذَا الْاَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ اَمْرِي ‘ اَوْ قَالَ : ‘ فِي عَاجِلِ اَمْرِي وَآجِلِهِ، فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ، وَاقْدُرْ لِي الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ اَرْضِنِي-
‘হে আল্লাহ! আমি আপনার জ্ঞানের দ্বারা আমার উদ্দিষ্ট কাজের মঙ্গলামঙ্গল জানতে চাই এবং আপনার ক্ষমতাবলে আমি কাজে সক্ষম হতে চাই। আর আমি আপনার মহান অনুগ্রহ প্রার্থনা করি। কারণ, আপনি ক্ষমতাবান আর আমার কোনো ক্ষমতা নেই। আপনি জানেন আর আমি জানি না। আপনিই গায়েব সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। হে আল্লাহ! যদি আপনার জ্ঞানে এ কাজটিকে আমার দ্বীনের ব্যাপারে, আমার জীবনধারণে ও পরিণামে কিংবা বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিক থেকে মঙ্গলজনক বলে জানেন, তাহলে তা আমার জন্য নির্ধারিত করে দিন। আর যদি আমার এ কাজটি আমার দ্বীনের ব্যাপারে, জীবনধারণে ও পরিণামে কিংবা আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিক থেকে আপনি আমার জন্য অমঙ্গলজনক মনে করেন, তবে আপনি তা আমার থেকে ফিরিয়ে নিন। আমাকেও তা হতে ফিরিয়ে রাখুন। আর যেখানেই হোক, আমার জন্য মঙ্গলজনক কাজ নির্ধারিত করে দিন। তারপর আমাকে আপনার নির্ধারিত কাজের প্রতি তৃপ্ত রাখুন।’
নোট : ‘আমরি বা এই কাজ’ অংশের পরিবর্তে নির্দিষ্ট কাজটির কথা উল্লেখ করবে।
৪. আল্লাহর কাছে নিজের অক্ষমতা ও অপারগতা প্রকাশ করা।
৫. ইস্তেখারার পর অন্তরের ঝোঁক অনুযায়ী কাজ করা।
নোট : ইস্তেখারার পর স্বপ্ন দেখা জরুরি নয়; বরং অন্তরের ঝোঁক অনুযায়ী কাজ করাই যথেষ্ট।
আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি (সা.) তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন–‘যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তোমার সামনে আসবে, তখন সাতবার আল্লাহর কাছে ইস্তেখারা করবে। এরপর মনের ঝোঁকের দিকে লক্ষ রাখবে, কারণ এতেই মঙ্গল রয়েছে।’
৬. ইস্তেখারার সময় না পেলে হাদিসে বর্ণিত দুআ পড়া। আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত–‘নবি (সা.) যখন কোনো কাজের ইচ্ছা করতেন, তখন বলতেন–
اَللَّهُمَّ خَرْ لِي وَاخْتَرْ لِيْ
“হে আল্লাহ! এটিকে আমার জন্য কল্যাণকর করুন এবং আমায় কল্যাণ দান করুন।”’
লেখক: মুফতি আবু বকর ইবনে মুস্তফা
ক্যাটাগরি: ইসলামি জীবন
প্রকাশনায় : গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স
পৃষ্ঠা সংখ্যা : 288
মূল্য : 290 টাকা