হবু বাবা-মায়ের প্রস্তুতি-মাতৃত্ব : স্বপ্ন বুননের পথে বই
ln.Author: গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স
: Sep 23, 2024
: ১০৩
বিয়ের পরপরই চলে আসে একজন নারীর সন্তান নিয়ে ভাবনা। মা হয়ে ওঠার জন্য কিংবা একটি সার্থক গর্ভধারণের জন্য একজন মায়ের কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। কেননা, একটি সুস্থ-সবল বাচ্চার স্বপ্ন সব বাবা-মাই দেখে।
তাই স্বপ্নের সূচনা যেন ভালোভাবে হয়, তার জন্য গর্ভধারণের পূর্ব থেকেই কিছুটা প্রস্তুতির নেওয়া উচিত। তাহলেই একটি সুস্থ-সবল নেককার সন্তানের স্বপ্নটি পূরণ হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক, গর্ভধারণের আগে কী কী প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।
১. মানসিক প্রস্তুতি
গর্ভধারণের পূর্বে শুরুতেই আপনি আপনার মানসিক অবস্থা কেমন, সেটা দেখবেন। ভেবে দেখবেন, আপনারা এখন সন্তান চান কি না? সন্তানের দেখভাল করার মতো লোকজন ও পর্যাপ্ত সময় আছে কি না? আপনাদের দুজনের মাঝে ভালো বোঝাপড়া আছে কি না? এই প্রশ্নগুলো নিজেকে করুন। যদি ইতিবাচক উত্তর পান, তবে বুঝতে হবে–আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত। আর নেতিবাচক উত্তর পেলে গর্ভধারণের চেষ্টা করার আগে আরও ভালোমতো ভেবে নিন।
গর্ভধারণের পূর্বেই একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হোন। মনে রাখবেন, প্রতিটি মানসিক অসুস্থতা যেমন : বাইপোলার ডিজঅর্ডার, স্কিতজোফ্রেনিয়া এবং অন্য যেকোনো অসুখের ক্ষেত্রে ঝুঁকি অথবা বিপদগুলো ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের হয়ে থাকে। তাই মা হতে যাওয়ার আগে সেগুলো নিয়ে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. শারীরিক প্রস্তুতি
একজন নতুন অতিথিকে স্বাগত জানানোর জন্য আপনারা যখন মানসিকভাবে পুরোপুরি প্রস্তুত, তখন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে দেখা করে মেডিকেল চেকআপ করুন। এতে করে আপনি জানতে পারবেন
বাচ্চা নেওয়ার জন্য আপনার শরীর প্রস্তুত কি না।
কেননা, একটি স্বাস্থ্যবান বাচ্চা জন্ম দেওয়া একজন সুস্থ মায়ের ওপর নির্ভর করে। এজন্য প্রি-প্র্যাগন্যান্সি চেকআপ করে নেওয়া উচিত। যদিও আমাদের দেশের মায়েরা এতটা সচেতন নয়। তারা মোটামুটি জটিলতায় না পড়লে ডাক্তারের কাছে যেতে রাজি হয় না। কিন্তু একজন সুস্থ-সবল সন্তানের জন্য এটা জরুরি। কিছু মেডিকেল কন্ডিশন ও জীবনযাত্রার মান গর্ভধারণকে প্রভাবিত করে; এমনকি গর্ভধারণ করার ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করে।
আপনার অ্যাজমা, ডায়াবিটিস, ডিপ্রেশন ও অন্যান্য ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে গর্ভধারণের আগেই সেগুলো খাওয়া বন্ধ করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কেননা, এতে সন্তান বিকলাঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রুবেলা, চিকেন পক্সের টিকা আগেই নিয়ে রাখুন।
এ ছাড়া ১৫ বছরের পর সব মেয়েরই টিটি টিকা নেওয়া উচিত। যেকোনো ভ্যাক্সিন নেওয়ার পর কমপক্ষে এক মাস অপেক্ষা না করে গর্ভধারণের চেষ্টা চালাবেন না। সর্বোপরি একজন গাইনি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আপনার প্র্যাগন্যান্সি জার্নি শুরু করা উচিত।
আমরা দুদিনের জন্য কোথাও বেড়াতে গেলে কতদিন আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে থাকি। ব্যাগ গোছানো, টিকিট কাটা, এই-সেই কত কি! আর এই জার্নিটা তো দীর্ঘ নয় মাসের। এর জন্যও তো সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, তাই না?
৩. আর্থিক প্রস্তুতি
আমাদের সবার এমনকি নতুন সন্তানের রিজিকের মালিকও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা। সেই মহান রবের ওপর ভরসা রেখেই আপনার কিছুটা আর্থিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখা উচিত। কেননা, বর্তমান সময়ে অর্থ ছাড়া জীবন অচল। তাই আপনার পরিবারে কোনো নতুন অতিথিকে আনতে যে আর্থিক খরচটা হয়, গর্ভধারণের চেষ্টাকালেই সেটা যথাসম্ভব নির্দিষ্ট পরিমাণে জমানো উচিত। গর্ভাবস্থায় হবু মায়ের নিয়মিত মেডিকেল চেকআপসহ নানা ধরনের মেডিসিনের জন্য মোটামুটি কিছু খরচ আছে। ক্লিনিকে বাচ্চা প্রসবকালীন খরচের ব্যাপারটাও মাথায় রাখবেন।
যেকোনো সময় ইমার্জেন্সি অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকবেন। এই জার্র্নিতে কখন কী হয়, তা বলা মুশকিল।
• হবু বাবাকে বলছি
আপনার স্ত্রীর এই প্রেগন্যান্সি জার্নিতে আপনি একজন অন্তরঙ্গ সহযাত্রী। তার এই মানসিক অবস্থায় আপনার সমর্থন সব থেকে বেশি প্রয়োজন। তার প্রতিটি মুহূর্তের অবস্থা যেন আপনার নখদর্পণে থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
মা যদি পারিবারিক অশান্তির মধ্যে থাকে, তাহলে আপনার বাচ্চার বুদ্ধি ও বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হবে। মনে রাখবেন, হবু মায়ের পুষ্টি, ঘুম ও মানসিক প্রশান্তি বাচ্চার বৃদ্ধি ও বিকাশে প্রভাব ফেলে। মাকে পুষ্টিকর খাবার না খাওয়ালে বাচ্চার স্বাস্থ্য ও বুদ্ধি ঠিকমতো বিকশিত হবে না।
লেখক: মোরশেদা কাইয়ুমী
ক্যাটাগরি: সন্তান প্রতিপালন (প্যারেন্টিং)